রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৮ অপরাহ্ন
মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার:
নতুন দলিল করে জালিয়াতির মাধ্যমে জায়গা দখলের পায়তারার অভিযোগ এনে সুনামগঞ্জ স্পেশাল জজ আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে ২০০৪ এর তপশীলভূক্ত দ্যা পেনাল কোডের ১২০বি/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারার অপরাধে ভূক্তভোগী পরিবারের সদস্য মোঃ আলমগীর হোসেন মামলা দায়ের করেন। মামলাটি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নের অন্তর্গত রাজনগর গ্রামের তিনজন ইংল্যান্ড প্রবাসী আব্দুল হালিম, ছুরত মিয়া ও রফিক মিয়াসহ মোট এগারোজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়।
মামলায় রাজনগর গ্রামেরমৃত আব্দুল আহাদের স্ত্রী মালেছা বিবি, তার ছেলে ইংল্যান্ড প্রবাসি আব্দুল হালিম, মৃত মনফর উল্লাহর স্ত্রী ছালেছা বিবি, তার ছেলে ইংল্যান্ড প্রবাসি মোঃ ছুরত মিয়া ও মোঃ রফিক মিয়া, মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে মোঃ সুনু মিয়া, মৃত সৈয়দ আঞ্জব আলীর ছেলে সৈয়দ আনছার আলী, রাধানগর গ্রামের মৃত কালা মিয়ার ছেলে মোঃ রাজা মিয়া, দিরাই উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রর আব্দুল বাতেন, জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউড়া গ্রামের মৃত ওয়াত্তির উল্লাহর স্ত্রী ছালেমা বিবি ও তার ছেলে আমিরুল ইসলামকে আসামী করা হয়।
মামলার সূত্রে জানা যায়, গত ৩০/০৪/২০১৯ইং তারিখে অফিস চলাকালীন দিরাই সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে একটি ৭৩২/১৯ও ৭৩৩/১৯ দলিল দুটি রেজিস্ট্রি হয়। দুটি দলিলের গ্রহিতা ইংল্যান্ড প্রবাসি আব্দুল হালিম,ছুরত মিয়া ও রফিক মিয়া রেজিস্ট্রিকালীন উপস্থিত ছিলেন না। বিশেষ করে আসামী সুনু মিয়া ও আনছার মিয়াসহ সকল আসামী বিষয়টি জেনেও পরস্পর যোগাযোগী মূলে অন্যায় লাভবান হওয়ার স্বার্থে এবং দরখাস্তকারী আলমগীরের বিরাট ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয়ে দলিল লেখক রাজা মিয়া ও সাব-রেজিস্ট্রার আব্দুল বাতিনের সহযোগিতায় ঘটনার সময় ও তারিখে আসামী আব্দুল হালিম, ছুরত মিয়া ও রফিক মিয়া উপস্থিত থেকে বর্ণিত দলিল দুটিতে টিপসহি/স্বাক্ষর দিয়েছেন বলে দেখানো হয়েছে। বর্ণিত দলিল দুটির দাতা আসামী ছালেছা বিবি মামলার ঘটনার আগেই দলিল দুটিতে বর্ণিত সম্পত্তির প্রাপ্য অংশ উনার টাকার প্রয়োজনে দরখাস্তকারীর আপন ভাই ইংল্যান্ড প্রবাসী রুবেল আহমদ দেশে ছুটিতে থাকাকালীন ৫/১২/২০১৮ইং তারিখে ২১৪৪নং রেজিস্ট্রি দলিল মূলে বিক্রি করে হস্তান্তর করেন, যা দরখাস্তকারী পরিবার আগেই দখলে ছিল। যে সম্পত্তি আগেই বিক্রি করে হস্তান্তর করেছেন, সেই সম্পত্তি আবার ছালেছা বিবি জালচক্রের সদস্য আসামী ইংল্যান্ড প্রবাসি আব্দুল হালিমগংসহ আসামী সুনু মিয়া ও আনছার মিয়ার কু-পরামর্শে আসামী ছালেছা বেগমকে ফাঁদে ফেলে ২১৪৪নং দলিল গ্রহিতা রুবেল আহমদের পরিবারকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে এবং তাদের বাড়িঘর দখলে নিতে পূনরায় আর দুটি দলিল বর্ণিত ৭৩২/১৯ও৭৩৩/১৯ আসামী দলিল লেখক রাজা মিয়ার সহযোগিতায় সম্পাদিত হয়, যা বাংলাদেশী আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ বলে মামলায় উল্লেখ করেন।
গ্রামের মুরুব্বিদের জিজ্ঞেস করে জানা যায়, দলিলদাতা আসামী মালেছা বিবি, ছালেছা বিবি ও ছালেমা বিবি দরখাস্তকারী আলমগীর হোসেনের সম্পর্কে আপন ফুফু। তাদের বিয়ের পর সম্পূর্ণ সম্পত্তির ভোগ দখলে ছিলেন দরখাস্তকারীর পিতা মাহমদ আলী। পিতার মৃত্যুর পর প্রায় ১৪ বছর যাবত দুটি দলিলে দেখানো হস্তান্তরিত সকল ভূমির দখলে আছে দরখাস্তকারী আলমগীর ও তার পরিবার। বর্ণিত ৭৩২/১৯ ও৭৩৩/১৯ দলিলে যে ২৫ বছরের একই রকম বিবরণ উল্লেখ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বনোয়াট এবংবর্ণিত দুটি দলিলে যে পরিমাণ সম্পত্তি হস্তান্তরিত দেখানো হয়েছে, সেই পরিমাণ সম্পত্তিতে দাতাদের মালিকানা নেই, দখলেও নেই। দলিল দুটির সম্পত্তির চৌহাদ্দা বর্ণনায়ও ভূল তথ্য দেওয়া হয়েছে, যা ছিল প্রতারকদের নিতান্তই ষড়যন্ত্র ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
ঘটনার তারিখে আসামী আব্দুল হালিম, ছুরত মিয়া ও রফিক মিয়া দেশে না থাকলেও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কোন কোন আসামী বিশেষ করে সুনু মিয়া ও আনছারের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সহযোগীতায় অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে এবং অন্যান্য আসামী এই ষড়যন্ত্রে সহায়তা করে প্রতারণা, দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে দরখাস্তকারী আলমগীর হোসেন ও তার পরিবারের সম্পত্তি আত্মসাতে মিথ্যা দলিল সৃজন করেন। দরখাস্তকারীর আবেদন ও নথি দেখে পর্যলোচনা করে মাননীয় আদালত ফৌজদারি কার্যবিদি ২০০ ধারার বিধান মতে দরখাস্তকারীর জবানবন্দী হলফান্তে গ্রহণ করলেন। নথিসহ দাখিলী কাগজাদি পর্যালোচনা করে দরখাস্তে বর্ণিত অভিযোগ গুরুতর উল্লেখ করে স্পেশাল মামলা হিসাবে রেজিস্ট্রি ও নম্বরভূক্ত করেন। দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২০(১) ধারা মোতাবেক যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য এ আদেশের অনুলিপিসহ মামলাটি দুর্নীতি দমন কমিশন সম্বলিত জেলা কার্যালয় সিলেট বরাবরে প্রেরণের নির্দেশ দেয়া হয় বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে মোবাইলে লন্ডন প্রবাসি মোঃ ছুরত মিয়ার সাথে কথা বললে প্রথমে তিনি স্বীকার করেন যে, ভূমি রেজিস্ট্রির সময় তিনি ভূমি অফিসে উপস্থিত ছিলেন না, ফলে তিনি স্বাক্ষরও দেননি। পরে আবার কথা ঘুরিয়ে তিনি বলেন, দুতাবাসের মাধ্যমে তিনি দলিল সেখানে নিয়ে স্বাক্ষর করেছেন। সব স্বাক্ষরই একই রকম-প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।
মামলার অন্যতম আসামী সুনু মিয়া জানান, এ জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা চলতেছে। তারা আগে একটি দলিল করে নিয়ে আমাদেরকে এখন হয়রানী করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। স্বাক্ষর করানোর জন্য ইংল্যান্ডে কোন কাগজপত্র পাঠানো হয়নি বলেও তিনি স্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ইংল্যান্ড প্রবাসি রুবেল আহমদ বলেন, আমার সাফকাবালা দলিল যেখানে ক্রেতা ও বিক্রেতা এবং স্বাক্ষীগনের স্বশরীরে সাবরেজিস্টার অফিসে উপস্থিত থেকে এবং সাবরেজিস্টারের সামনে বিক্রেতার সম্পূর্ণ মতামতের ভিত্তিতে দলিল সম্পাদিত হয়, সেই দলিলের বিরুদ্ধে জালচক্রের সদস্য আসামী আব্দুল হালিম, ছুরত মিয়া, রফিক মিয়া এবং বিশেষ করে সুনু মিয়া ও আনছার মিয়া বিক্রেতা ছালেছা বিবিকে ফাঁদে পেলে বাদী বানিয়ে মাননীয় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিথ্যা মামলা দিয়ে অনেক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন করেছে এবং তার বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট খবর প্রচার করে তার মানসম্মানের হানী ঘটিয়েছে। তিনি তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও জালচক্রের সকল ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।